আজ মঙ্গলবার, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হাসপাতাগুলোতে হায়রানীর শিকার !

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
সড়কে নৈরাজ্য কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনর বিষয়। নারায়ণগঞ্জ সহ এর আশপাশ এলাকায় ক্রমশেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটন। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে যেমন তেমন করে হতাহতের ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তি ঠিক তেমনি ভাবে ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে আহত মানুষটিকে সহায়তা প্রদানকারী ব্যক্তি।

জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পরে যে সকল মানুষগুলো নিত্যদিন হতাহতের শিকর হচ্ছে তাঁদের প্রাণ রক্ষার্থে এগিয়ে আসছে সাধারণ পথচারী কিংবা স্থানীয় মানুষ। মানব সভ্যতাকে সম্মান জানিয়ে এবং নিজেদের মানবিক দিককে উপলব্ধি করে প্রায়ই দেখা যায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে কেউ না কেউ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যাচ্ছে।

আর বিপত্তি ঘটছে ঠিক তখনি। কর্তব্যরত ডাক্তাররা আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা প্রদান না করে কে বা কারা আহতকে হাসপাতাল নিয়ে আসছে সেই বিষয়ে তদারকী করছে।

গত ১ মে (বুধবর) নগরীর চাষাড়াস্থ পুলিশ বক্সের উপর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বিজ্ঞাপন ঘরের উপর থেকে অজ্ঞাত এক যুবক বৈদ্যতিক শর্টসার্কিটে আহতে হয়ে সড়কে পরে যায়। ঘটনস্থলে আহতের রক্তাক্ত শরীর দেখে অনেকেই এগিয়ে আসে। কিন্তু আহতকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যে হাসপাতালে পাঠাতে হবে সেই সংক্রান্তে কোন মানুষই ততোটা হস্তক্ষেপ করছে না বলে জানা যায়।

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যমে জানা যায়, ওই দিন আহত ব্যক্তি যখন উপর থেকে পরে ব্যাপক আহত হয় সেই সময় ঘটনস্থলে মানুষের ভির জমে যায়। তখন অনেকেই বলাবলি করছিলো দ্রুত চিকিৎসার জন্য আহতকে খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যেতে। সেই সময় উপস্থিত জনতা শুধু বলছে হাসপাতালে নিয়ে যেতে কিন্তু কোন ব্যক্তি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে নি। এক পর্যায়ে একজন পথচারীর মাধ্যমে আহত অজ্ঞাত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খানপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সহায়তা প্রদানকারী ব্যক্তিকে খুজে বের করে সেই দিনের ঘটনার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, প্রথমত সেই দিন ওই যুবকের অবস্থা খুবই আশংকাজনক ছিলো। তার শরীরের বিভিন্ন স্থান পুরে গেছে। সিটি কর্পোরেশনের বিজ্ঞাপন ঘরের উপর থেকে মূল সড়কে পরে আহত যুবকের মাথা ফেলে অনড়গল রক্ত বের হচ্ছিলো। সেই সময় কোন মানুষ এগিয়ে না আসলেও মানবতার খাতিরে আমি এগিয়ে আসি এবং চিকিৎসা দেওয়ার লক্ষে আহতকে নিয়ে দ্রুত খানপুর হাসপাতালে নিয়ে যাই।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা চিকিৎসা প্রদান না করেই কে এই অজ্ঞাত মানুষকে নিয়ে আসছে বলে চিৎকার করতে থাকে এক পর্যায়ে আমি ভয়ে আতংকে বলতে পারি নি আমি নিয়ে আসছি। একজন সাংবাদিকের সহায়তায় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে ঘটনার বিষয় অবহিত করলে ক্ষনিকবাদেই হাসপাতালের জরুরী বিভাগে পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। তবে সেই বিষয়টি আমি কখনোই ভুলবো না।

আমি কি উপকার করলাম, নাকি বিপদে পড়লাম সেটাই বুঝতে পারছি না। একজন পথচারী হিসেবে সেই দিন আমি সহযেগীতার হাত বাড়িয়েছিলাম। কর্তব্যরত ডাক্তার বার বার বলছিলেন সেই দিন যে এই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসছে সেই ব্যক্তিই তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, একজন মানুষ হিসেবে সেই দিন সহযোগীতার জন্য আমি এগিয়ে এসেছিলাম। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আচরণ দেখে আমি প্রচন্ড রকম আতংকিত হয়ে যাই এবং মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই আর কখনোই অজ্ঞাত কোন আহত ব্যক্তিকে সযোগীতা করবো না।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, সড়ক দুর্ঘটনা সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত মানুষদের অনেকেই হাসপাতালে নিয়ে আসে। যখন আহত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তখন কাউকে খুজে পাওয়া যায় না। পুলিশকে ফোন করলে তারাও এই ব্্যাপারে উদাশীন মনোভাব দেখায়। দিনের পর দিন অজ্ঞত লাশ নিয়ে আমাদের ঝুলে থাকতে হয়। তাই দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিন চিকিৎসার পাশাপাশি কে বা করা নিয়ে আসছে সেই বিষয়েও তদরকী করতে হয়। তা না হলে আমাদেরই দুর্ভোগ পুহাতে হয়।

এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩০০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসা তত্তাবধায়ক ডা. আবু জাহেরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, যে সকল মানুষ সড়ক দুর্ঘটায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসতে পুলিশ প্রশাসন সহ নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের পুরস্কৃকত করার। যারা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসে তাদের পরিচয় সংগ্রহ করতে হয়। কেননা অনেক সময় পুলিশ কেচ হয় এবং সেই সময় পুলিশ আহতদের সহায়তা দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় জানতে চায়। তবে এতে আতংকিত কিংবা ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।

অভিযোগের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে এবং সেই সময় যদি আহতের কোন আত্মীয় থাকে তাহলে কর্তব্যরত ডাক্তার বলে এটা নিয়ে আসেন ওইটা নিয়ে আসেন। অপর দিকে যখন কোন পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মানুষদের জরুরী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসে তখন দেখা যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমিক চিকিৎসা সেবা না দিয়ে আগে কে নিয়ে আসছে তাকে খুজে। কাউকে খুজে না পেলে পুলিশকে ফোন করে। তাদের এই এহেন কর্মকান্ডের কারনে চিকিৎসার অভাবে অনেকেরই মৃত্যু হয়।

যারা সহযোগীতা করে তাঁদের কেন এতো দুর্ভোগ পোহাতে হয় জানতে চাইলে মি. কামরুল ইসলাম বলেন, আসলে তাঁদের কোন দুর্ভোগ নেই। সমস্যাটা হলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যে সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে পরে। পুলিশকে বুঝিয়ে দিতে পারলেই ডাক্তারদের দায় শেষ।

নগরীর বিশিষ্টজনদের মতে যারা আহতদের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন আগে তাঁদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা উচিত। ধন্যবাদের জায়গায় আমাদের কর্তৃপক্ষ তাঁদের দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনটা মোটেও কাম্য নয়। মানুষ যাতে সর্বদা মানুষকে সহযোগীতা করে সই বিষয়টিকে মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। মানুষকে উৎসাহিত কতে হবে।